লেখা- প্রদীপ শাসমল স্যার।
কেন্দ্র বা অন্যান্য রাজ্যের সাপেক্ষে এ রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের নিয়মে পার্থক্য বেশ পরিলক্ষিত হয়। MHRD কে ধরে নিয়মে শিথিলতা হোক বা নিয়ম মানবো বলেও সাইড কাটিয়ে নিয়ম না মানার প্রবণতা হোক, এ রাজ্য তার নিজস্ব ঘূর্ণাবর্তে নিয়মের মৌসুমীবায়ুর আগমন ঘটায়।
যাইহোক, NCTE-র নিয়মে নিয়োগ হয়নি বলে ত্রিপুরাতে ১০৩২৩ টিচারের ভবিষ্যৎ আজও ঝুলে আছে। আবার এ রাজ্যে আপার প্রাইমারির টেটটা আদৌ NCTE-র গাইডলাইন অনুযায়ী (৩০+৩০+৩০+৬০) হয়েছে কিনা আমার সন্দেহ আছে! সেইসাথে কথায় কথায় কেসের কেশ ছেঁড়া তো আছেই!
RTE’2009 এর ২৩ ধারার ১ উপধারায় কিন্তু টিচারদের যোগ্যতার কথা বলা আছে। এছাড়া NCTE-র ২৩ শে আগষ্ট’২০১০, ২৯শে জুলাই ২০১১, ১২ই নভেম্বর’২০১৪ এবং ২৮শে জুন’২০১৮-এর নোটিফিকেশন গুলিতে এই এলিজিবিলিটি নিয়ে বিস্তারিতভাবে বলা আছে। তবে একথা বলা যায় যে, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই কিন্তু স্কুলশিক্ষায় চারটি স্তরে(প্রাথমিক,উচ্চপ্রাথমিক,৯-১০,১১-১২) শিক্ষক নিয়োগ করতে চলেছে।
এবার এলিজিবিলিটি গুলো দেখে নেওয়া যাক!
#প্রাথমিক(১-৫):
১. HS(৫০%)+২ বছরের D.El.Ed
২. HS(৪৫%)+২ বছরের D.El.Ed,
১৩.১১.২০০২ এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে।
৩. HS(৫০%)+২ বছরের Diploma in Special Education.
৪. গ্র্যাজুয়েশন +২ বছরের D.El.Ed
৫. গ্র্যাজুয়েশন(৫০%)+ B.Ed.
চাকরী পাওয়ার ২ বছরের মধ্যে ব্রিজকোর্স করতেই হবে।
এগুলোর মধ্যে যেকোন একটি ক্রাইটেরিয়া।
এবং আড়াই ঘন্টায় হওয়া ১৫০ নম্বরের টেট যাতে জেনারেলদের ৬০% (৯০)পেতেই হবে এবং রিজার্ভডের ৫% শিথিলযোগ্য(৮২)।
আর টেটে প্রথম ভাষা,দ্বিতীয় ভাষা,শিশুমনস্তত্ত্ব,পরিবেশবিদ্যা ও গণিতে যথাক্রমে ৩০,৩০,৩০,৩০,৩০ নম্বর থাকবেই।
#উচ্চপ্রাথমিক(৬-৮):১.গ্র্যাজুয়েশন+২বছরের D.El.Ed
২.গ্র্যাজুয়েশন(৫০%)+ B.Ed.
৩.গ্র্যাজুয়েশন(৪৫%)+ B.Ed.
১৩.১১.২০০২ এর নোটিফিকেশন অনুযায়ী।
৪. H.S.(৫০%) +৪ বছরের B.El.Ed.
৫. H.S.(৫০%)+৪ বছরের B.A.Ed/B.Sc.Ed
৬. গ্র্যাজুয়েশনে ৫০% +B.A. in Special Education. সেইসাথে টেট পাশ হতেই হবে। টেটের নম্বর বিভাজন..
প্রথম ভাষা-৩০,দ্বিতীয় ভাষা-৩০,শিশু মনস্তত্ত্ব-৩০,বিজ্ঞান ও গণিত/সমাজবিজ্ঞান-৬০, মোড় ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। #উপরের দুটি ক্ষেত্রেই স্পেশাল এডুকেশনের ডিগ্রীধারীদের এলিমেন্টারি এডুকেশনের ৬ মাসের ব্রিজ কোর্স করতে হবে।
১. গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে ৫০% + B.Ed.
২. ১৩.১১.২০০২ এর নোটিশ অনুসারে গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে ৪৫%+ B.Ed.
৩. B.A.Ed/B.Sc.Ed.
১. পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে ৫০% +B.Ed.
২. ১৩.১১.২০০২ এর নোটিফিকেশন অনুযায়ী পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে ৪৫%+B.Ed.
৩. পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে ৫০%+ B.A.Ed/B.Sc.Ed.
রিক্রুটিং অথরিটি চাইলে রিজার্ভড ক্যান্ডিডেটরা শিক্ষাগত যোগ্যতায় ৫% পর্যন্ত ছাড় পেতে পারে।
NCTE অনুযায়ী চারধরনের শিক্ষক নিয়োগের সংস্থান থাকলেও প্রায় সব রাজ্য ও কেন্দ্রে তিন ধরনের টিচারই নিয়োগ করা হয়.... PRT(১-৫),TGT(৬-১০) এবং PGT(১১-১২)।
এবার দেখে নেওয়া যাক কেন্দ্রের স্কুলগুলির যোগ্যতা, বয়স বা পদ্ধতি কেমন।
১.#PRT..শিক্ষাগত যোগ্যতা পুরোপুরিভাবে উপরে উল্লিখিত NCTE রুল অনুযায়ী। আর সাধারণ প্রার্থীদের বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর।
২.#TGT..
সংশ্লিষ্ট সাব্জেক্টে ৫০% বা সাব্জেক্ট কম্বিনেশনে প্রত্যেকটিতে ৫০% সহ ওভারঅল ৫০% নম্বর নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন + বি.এড + CTET.
তবে Art,Music,Librarianও PET প্রভৃতির জন্য বি.এড বা CTET বাধ্যতামূলক নয়। লাইব্রেরিয়ান দের ক্ষেত্রে লাইব্রেরি সায়েন্সে ডিগ্রী বা গ্র্যাজুয়েশন ও লাইব্রেরি সায়েন্সে ডিপ্লোমা।
১.টিজিটি হিন্দী ও ইংরেজির জন্য ওই সাব্জেক্টে গ্র্যাজুয়েশন হলেই চলবে।
২. টিজিটি ম্যাথের ক্ষেত্রে…
ক) ম্যাথ অনার্সের প্রার্থীদের প্রথম দুবছর পাশে ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রি/ইলেকট্রনিক্স/কম্পিউটার সায়েন্স/স্ট্যাটিস্টিকস থাকতে হবে।
খ) ম্যাথ,ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি/ইলেকট্রনিক্স/কম্পিউটার সায়েন্স/স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন।
গ) আবার ফাইনাল ইয়ারে যাদের ৩ টে বিষয় গ্র্যাজুয়েশনে থাকেনা তাদের ফাইনাল ইয়ারে অবশ্যই ম্যাথ ও ফিজিক্স থাকতে হবে এবং প্রথম ২ বছর কেমিস্ট্রি/ইলেকট্রনিক্স/কম্পিউটার সায়েন্স/স্ট্যাটিস্টিকস থাকতে হবে।
ঘ)ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি অনার্স ডিগ্রীধারীরা আবেদন করতে পারবেন না!
৩.টিজিটি সোশ্যাল সায়েন্সের ক্ষেত্রে অনার্স বা সাধারণ গ্র্যাজুয়েশন যাইই হোক না কেন তাতে ইতিহাস বা ভূগোলের যেকোন একটি তিনবছর পড়ে থাকতেই হবে এবং সাব্জেক্ট কম্বিনেশনে ইতিহাস বা ভূগোলের একটি অবশ্যই রেখে ইতিহাস,ভূগোল,ইকোনমিক্স ও পলসায়েন্সের মধ্যে ২ টো সাব্জেক্ট থাকতেই হবে।৪ টিজিটি সায়েন্সের ক্ষেত্রে কেমিস্ট্রি,বোটানি ও জুওলজি নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করতে হবে। এক্ষেত্রে কন্ডিশনগুলো #TGT_Math এর মতোই হবে।
অর্থাৎ কেমিস্ট্রি অনার্সের ক্যান্ডিডেট এই টিজিটি সায়েন্সে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না!
সাধারণের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর।
৩. #PGT..
৫০% নম্বর নিয়ে মাস্টার্স + বি.এড। তবে কম্পিউটার পোস্টের জন্য বি.এড বাধ্যতামূলক নয়।
সাধারণ প্রার্থীদের জন্য বয়সের উর্দ্ধসীমা ৪০ বছর।
অর্থাৎ সিটেটটা জাস্ট PRT ও TGT-র এলিজিবিলিটি!
এ রাজ্যে WBCSSC তার প্রথম SLST তে MCQ করলেও সেটা মাত্র ৫৫ নম্বরের ছিল তাও শুধুই বিষয়ের উপর।
তাই সবদিক বিবেচনা করেই, বাকী সব রাজ্য বা কেন্দ্রের সাথে তাল মিলিয়ে এ রাজ্যের টিচার নিয়োগের যোগ্যতামান বা পরীক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতেই হ'ত। যেটা আগে হওয়া উচিত ছিল সেটা নিয়ে যে অন্ততপক্ষে এখন চিন্তাভাবনা চলছে সেটাকে স্বাগত জানাই!
#টিচার নিয়োগ নিয়ে আগামী পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমার কয়েকটি সাজেশন..
১. স্টাফ প্যাটার্নের গেরো বা বেতনক্রমের চুলোচুলি সামলাতে নিয়োগ তিনস্তরেই অর্থাৎ PRT/TGT/PGT তেই সীমাবদ্ধ থাকুক।
২. টেট পরীক্ষা দুটি ভিন্ম লেভেলেই কেন্দ্রের মতো নেওয়া হোক এবং সার্টিফিকেট দিক,সেইসাথে CTET উত্তীর্ণদেরও সুযোগ দেওয়া হোক।
৩. টেট পুরোপুরিভাবে NCTE-র নিয়ম মেনে হোক।
৪. এরপরের লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্রের মতোই হোক তবে নম্বর বা বিভাজম আলাদা হতেই পারে। কিন্তু প্যাটার্ন MCQ ই থাকুক।
৫. একই স্কেলে বা নিচু স্কেলে পরীক্ষা দেওয়া ব্যবস্থা আটঘাট বেঁধে নিষিদ্ধ হোক।
৬. নিয়োগ পরীক্ষা প্রতিবছর হোক আর ডিক্লেয়ারড ভ্যাকান্সি বাড়ানো বা কমানোর নাটক না করে ওই ভ্যাকান্সিতেই নিয়োগ করা হোক।
৭. SLST ই হোক কিন্তু ফর্ম পূরণের সময় জোন প্রেফারেন্সের ব্যবস্থা থাকুক।
৮. কাউন্সেলিং ছাড়াই প্রার্থীর পছন্দের জোনে অটোমেটিক সৎ পোস্টিং এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেইসাথে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রুটিন ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৯. সম্ভব হলে অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা নাহলে OMR এর কার্বন কপি বা অনলাইনে উত্তর পত্র ও নমুনা উত্তর দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. লিখিত, ইন্টার্ভিউ এর নম্বর সহ মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে।
১১. যারা মেধাতালিকায় স্থান পেলনা তাদেরও নম্বর দেখার অপশন রাখতে হবে।
১২. অ্যাকাডেমিকের জন্য নম্বর বরাদ্দ চলবেনা!
১৩. লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়ে ইন্টার্ভিউ এর গুরুত্ব কমাতে হবে।
১৪. সরকার, নিয়োগকারী সংস্থা ও চাকরীপ্রার্থী সবাইকেই সৎ ও স্বচ্ছ হতে হবে!
১৫. সবশেষে,কেস করে কেস খাওয়ার সুযোগ রাখা চলবেনা!
চাকরীপ্রার্থীদের এত ভেবে লাভ নেই। যখনখুশি গ্যাজেট বেরোতে পারে। দেখা গেছে যারাই তীর্থের কাক হয়ে কা কা করে ফেসবুক, মাসি,পিসি-র ঘর মাতিয়ে দেয়... তারাই আবার অ্যাড বের হওয়ার পর সিলেবাস শেষ করার সময় পায়না! ফলে, "আসছে বছর আবার হবে!"
২নম্বরের সেই "আবার আসিব ফিরে.."-র চান্স নেই বললেই চলে। যা হবে সব MCQ. হয় টেট+ সাব্জেক্ট বা শুধু টেট বা ৯-১০ ও পিজিটির জন্য খিচুড়ি বা শুধু সাব্জেক্ট হতে পারে। বা, পুরোপুরিভাবে কেন্দ্রের মতোও হতে পারে!
তাই এখন থেকে যা প্রিপারেশন নেওয়া উচিত।
১. সিটেট দেওয়া ও সিটেটের বউ পড়া।
২. বিগত টেটের স্ট্যান্ডার্ড বই পড়া।
৩. সাব্জেক্ট থরোলি পড়া।
৪. KVS/NVS এর টিচার রিক্রুটমেন্টের বইগুলো পড়া, বিগত দিনের প্রশ্ন চর্চা করা।
৫. বি.এড বা ডি.এল.এড এর সাইকোলজি ও পেডাগগির পার্টগুলো ভালোভাবে পড়া।
আশাকরি এভাবে প্রিপারেশন নিলে যেকোন মুহূর্তে যেকোন নিয়ম বা প্যাটার্নে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
This post was last modified on October 14, 2019 10:23 am
IIT Indore Recruitment 2024 IIT Indore Recruitment 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা…
DEO Job Vacancy 2024 DEO Job Vacancy 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা…
IARI Job Vacancy IARI Job Vacancy : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা আপনাদের সামনে…
GIRHFWT Recruitment 2024 GIRHFWT Recruitment 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা আপনাদের সামনে…
NVS Vacancy 2024 NVS Vacancy 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা আপনাদের সামনে…
Driver Job vacancy 2024 Driver Job vacancy 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা…