ব্যবসার কথা মাথায় আসলেই প্রথম ভাবনা শুরু হয়ে যায় কিসের ব্যবসা করবেন? এবার কোনো একটি ব্যবসার পরিকল্পনা করার পরে চিন্তা শুরু হয়, কত পুঁজি লাগবে, এর বাজার কিভাবে করা যাবে অর্থাৎ মার্কেটিং কিভাবে হবে, কোনো মেশিন লাগবে কিনা, লাগলে তার কি দাম হবে, কিভাবে ব্যবসাটি শুরু করতে পারি, জায়গা কি রকম প্রয়োজন, এই ধরনের বহু প্রশ্ন ব্যবসা করার শুরুতেই ভাবনায় আসে।
আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ ব্যবসা করার লক্ষ্য একটাই, মাসের শেষে একটা ভালো টাকা উপার্জন করা। আর সেই লক্ষ্যে সফল হওয়ার জন্য একাধিক ব্যবসার কথা মাথায় আসতে থাকে। ফলে অনেক সময় দেখা যায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে ওঠে না।
এখন আর সেই চিন্তা নেই। এই আলোচনায় এমন একটি ব্যবসার কথা জানানো হবে, যে ব্যবসা চট করে কারোর মাথায় না আসাটাই স্বাভাবিক। আবার এই ব্যবসার কথা জানলেই তিনি করতে আগ্রহী হবেন। কারণ সব সময় বিশেষ করে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এই দ্রব্যের চাহিদা থাকে।
আর এই দ্রব্যের বাজার রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে এক্ষুনি এই ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারেন। বিরাট পরিমাণ পুঁজির দরকার নেই। আবার বিরাট একটা বড় জায়গার দরকার নেই। বাড়িতেই এই ব্যবসাটি শুরু করে দেওয়া যায়। এবার জেনে নেওয়া যাক, কিসের ব্যবসা, কিভাবে শুরু করবেন, কত টাকা পুঁজি লাগবে, কোথায় মার্কেটিং করবেন, কতটা জায়গা লাগবে, কোন মেশিন লাগবে, এই সম্বন্ধে সম্পূর্ণ বিস্তারিত।
প্রথমেই পুজোয় প্রসাদ দিতে গেলে যে জিনিসটি লাগে সেটি হলো বাতাসা। শুধুমাত্র হিন্দুদের পূজো নয়, সমস্ত ধর্মের মানুষেরই বিভিন্ন প্রয়োজনে বাতাসা লাগে। এই প্রতিবেদনে সেই বাতাসা ব্যবসা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
যে কোনো ব্যবসা শুরুর আগে মার্কেট রিসার্চ করে নেওয়া প্রয়োজন। যে এলাকায় বসবাস করেন বা যেখানে বাতাসার ব্যবসা করতে চান, সেখানকার বাজার কেমন, কোন মার্কেটে গিয়ে বিক্রি করতে পারবেন, সেখানে বাতাসা কত দামে বিক্রি হচ্ছে, পাইকারি খুচরা দুই ব্যবসা সম্বন্ধেই প্রাথমিক ধারণা নিয়ে নিতে হবে।
সামান্য মূলধন দিয়েও এই ব্যবসা শুরু করা যায়। আবার একটু বড় আকারে করতে গেলে একটু বেশি পুজি বিনিয়োগ করতে হয়।
যদি অল্প মূলধন নিয়ে শুরু করে হাতেই বাতাসা বানাতে পারেন তাহলে বেশি জায়গার দরকার হবে না। কিন্তু একটু বড় ভাবে ব্যবসা করতে চাইলে কমপক্ষে ১০০ বর্গফুটের ঘর নিতে হবে। কারণ অটোমেটিক মেশিন বসাতে গেলে এই ১২০ বর্গফুটের মতো ঘর লাগবে।
যে কোনো ব্যবসা শুরুর আগে কাঁচামাল সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সেই কাঁচামাল কোথায় পাবেন, তার দাম কি, কোন জায়গা থেকে কিনলে সস্তায় পাবেন, ব্যবসায় লাভের পরিমাণ বাড়বে এই সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। তবে বাতাসা তৈরির জন্য যে কাঁচামাল লাগে তা কেনার জন্য খুব একটা দূরে বা বড় কোনো জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেকোনো মুদিখানা দোকানে এই কাঁচামাল পেয়ে যাবেন।
বাতাসা তৈরির জন্য লাগে বেকিং সোডা, চিনি, গুড়, ফুড কালার, চিনি গরম করার পাত্র এবং জল।
এবার জেনে নেওয়া যাক, বাতাসা কিভাবে তৈরি করা হয়-
উৎপাদন করার পরে মার্কেটিং খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মার্কেটিং ঠিকভাবে না করতে পারলে ব্যবসা দাঁড়াবে না। সেক্ষেত্রে বাতাসা তৈরি করার পর প্যাকেটজাত করে প্রতিটি মুদিখানা দোকান এবং দশকর্ম দোকানে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও স্থানীয় মন্দির সংলগ্ন যে সমস্ত দোকান রয়েছে সেখানেও বাতাসা বিক্রি করা যায়। স্থানীয় এলাকাতেই হোলসেল রেটে পাইকারি বাতাসা অনেক ব্যবসায়ী কিনে নেয়। সেখানে যোগাযোগ করলেও আপনি সহজেই বিক্রি করে দিতে পারবেন। এর জন্য দূরে কোথাও ছোটাছুটি করার দরকার হবে না। একটু ভালোভাবে মার্কেটিং করতে পারলে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ কিলো বাতাসা খুব সহজে বিক্রি করা যায়।
এবার যদি একটু প্রচার করতে চান, তাহলে এলাকাতেই ছোট বড় করে পোস্টার ব্যানার টাঙ্গিয়ে প্রচার করুন। এছাড়া বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমেও আপনার পণ্যের প্রচার করতে পারেন।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়েও আপনার তৈরি বাতাসার প্রচার করতে পারেন।
এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্যবসা তো শুরু করলেন সমস্ত কিছু করা হলো,এবার এই বাতাসা তৈরীর ব্যবসায় কত লাভ করতে পারবেন- বাতাসা তৈরীর ব্যবসায় লোকসান বলে কিছু নেই। যেভাবেই তৈরি করুন বাজারে প্রতি কিলো বাতাসা বিক্রি করলে কমপক্ষে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন। এবার প্রতিদিন আপনি যত পরিমান বাতাসা উৎপাদন করবেন এবার হিসাব করে দেখুন প্রতি কেজিতে ১০ টাকা লাভ। যদি মেশিন দিয়ে ব্যবসা করেন তাহলে প্রতি ঘন্টায় ৬০ কিলো বাতাসা তৈরি করা যায়। তাহলে প্রতি ঘন্টায় ৬০০ টাকা লাভ করতে পারছেন।
আবার হাতে তৈরি করে অল্প পুঁজি দিয়ে এই ব্যবসা করলেও যদি ১০ থেকে ২০ কিলোর মধ্যে বাতাসা উৎপাদন করতে পারেন তাহলেও খুব কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ করতে পারবেন। বাতাসা তৈরীর খুব ছোট ব্যবসায়ীরাও মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। অর্থাৎ এই ব্যবসায় বিনিয়োগ যত করবেন লাভের পরিমাণও ততই বাড়বে।
ছোট ভাবে প্রথমে করতে গেলে কোনো লাইসেন্সের দরকার নেই। তবে বড় করে করতে গেলে একটা লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য আপনি গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত অফিস বা বিডিও অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। আবার বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে লাইসেন্সের আবেদন করা যাচ্ছে। ফলে অনলাইনে আবেদন করলেই খাদ্য দপ্তরের লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। এবার লাইসেন্সের জন্য যে যে কাগজগুলো দরকার সেগুলো হল FSSAI License, MSME License, GST No. Trade License
এই লাইসেন্সগুলোর নাম শুনে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস, খাদ্য দপ্তর থেকে এগুলো সবই পেয়ে যাবেন।
আপনার এলাকার যে কোনো পাইকারি দোকান বা মুদিখানা দোকান থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন। তাছাড়া যে সমস্ত পাইকারি মার্কেট রয়েছে সেখান থেকেও বেশি পরিমাণে এই কাঁচামাল কিনে নিতে পারেন। আর কলকাতার বড়বাজারে যদি যান, সেখানে কাঁচামাল সহজেই পেয়ে যাবেন। কম দামেও হবে। হোলসেল রেটে বস্তা ধরে চিনি কিনে নিতে পারেন। ফলে এই কাঁচামাল পাওয়া খুব একটা কঠিন নয়।
বাতাসা তৈরীর জন্য অটোমেটিক পদ্ধতির মেশিন কোম্পানি অনুযায়ী বিভিন্ন দামের হয়। অটোমেটিক মেশিন দিয়ে বাতাসা তৈরীর ব্যবসা করলে প্রতি ঘন্টায় ৬০ কিলো বাতাসা তৈরি করতে পারবেন। আবার ছোট মেশিনে প্রতি ঘন্টায় ২৫ থেকে ৩০ কিলো বাতাসা তৈরি করতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে ভিন্ন রকমের মেশিনের ভিন্ন রকম দাম হবে। অন্তত ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা দাম পড়তে পারে। যদি নিজে একবারে এত টাকা দিয়ে কিনতে না পারেন, সেক্ষেত্রে কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেই স্পট ফিনান্স পেয়ে যাবেন। সেই ভাবেও নিয়ে নিতে পারেন।
প্রথমেই জানানো হয়েছে খুব অল্প পুঁজি দিয়েও এই ব্যবসা করতে পারেন। ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলেই বাতাসা তৈরীর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আবার যদি শুধু হাতে করে বাতাসা বানিয়ে ব্যবসা করতে চান তাহলে ৫০০০ টাকাই যথেষ্ট।
আর যদি বেশি পুজি বিনিয়োগ করতে চান তাহলে অটোমেটিক মেশিন কিনে অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বাতাসা তৈরি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বেশি হবে। ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকাও বিনিয়োগ করতে পারেন।
তবে প্রথম দিকে বাজার বোঝার জন্য ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে হাতে তৈরি করে বাতাসা তৈরি করে ব্যবসা শুরু করুন। তারপর ব্যবসার সম্বন্ধে ধারণা এসে গেলে পরে মেশিন নিয়ে করবেন।
অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে যদি প্রথমে হাতেই বাতাসা তৈরি করতে চান তাহলে মেশিনের প্রয়োজন নেই। এভাবে শুরু করতে পারেন। আর যদি একটু বড় আকারে করতে চান বেশি পরিমাণে টাকা আয় করতে চান, তাহলে বাতাসা তৈরীর জন্য অটোমেটিক মেশিন ব্যবহার করতে পারেন।
কলকাতার গনেশ চন্দ্র এভিনিউ, লালবাজার সংলগ্ন এলাকায় এই ধরনের বহু ব্যবসার মেশিন তৈরীর কোম্পানি রয়েছে। সেখানে গিয়ে মেশিন কিনে নিতে পারবেন। অথবা একটু ইন্টারনেটে গুগল সার্চ করে দেখে নিন, বাতাসা তৈরির মেশিন কোথায় আপনি কম দামে পেতে পারেন। সেই ঠিকানা জোগাড় করে কথা বলে সেখান থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন। তবে যে কোনো ব্যবসার জন্য মেশিন কেনার আগে নিজে সমস্ত কিছু ভালোভাবে বুঝে নিয়ে কিনবেন।
যদি আপনার এই প্রতিবেদনটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই খবরটি শেয়ার করবেন । আপনি চাইলে আমাদের Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন ।সেখানে নিয়মিত শিক্ষা, চাকরি , ব্যবসা , চাষবাস , সরকারি প্রকল্প , ব্যাঙ্ক তথা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন্ডিং খবরের আপডেট পেয়ে যাবেন ।
This post was last modified on January 14, 2023 11:49 am
Banana Powder making Business Banana Powder making Business : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা…
IPPB Job Vacancy 2024 IPPB Job Vacancy 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা…
Ward Boy Recruitment 2024 Ward Boy Recruitment 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা…
Manipur University Vacancy Manipur University Vacancy : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা আপনাদের সামনে…
Andrew Yule Career Andrew Yule Career : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা আপনাদের সামনে…
Reliance Career 2024 Reliance Career 2024 : বন্ধুরা কর্মসাথী ডট কমের আরও একটি প্রতিবেদনে আপনাদের স্বাগত জানাই । আমরা আপনাদের সামনে…